শীত থাকুক বা না থাকুক, হাঁটু, কোমর আর ঘাড়ের ব্যথার হাত থেকে নিস্তার নেই। অসময়ে শীত বিদায় নেওয়ায়, ব্যথায় কাতর রোগীরা ভাবছেন, ব্যথাও পালিয়ে যাবে। তা নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে একটা বিষয়ে সন্দেহ নেই, সয়াবিন খেলে হাড় মজবুত হয়। ফলে এই বাতের ব্যথা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যাবে সারা বছর ধরেই। এমনটাই বললেন ডায়েটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী।
কারা খেতে পারেন
ভরপুর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সয়াবিন সব বয়সিদের জন্যই সমান উপকারী। একমাত্র যাঁদের কিডনির অসুখ আছে এবং যাঁরা গাউটের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা ছাড়া প্রত্যেকেই সয়াবিন খেতে পারেন। ঋতুনিবৃত্তির পর মাঝবয়সী অনেক মহিলার হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই সমস্যা কমাতে সয়াবিন উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় নিতে পারে। এমনটাই বলছেন সুবর্ণা।
মহিলাদের জন্য ভাল
এক পরিসংখ্যান বলছে, সপ্তাহে নিদেনপক্ষে তিন দিন ৩০ থেকে ৫০ গ্রাম সয়াবিন ও নিয়মিত সয়ামিল্ক খেলে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়। মেনোপজের পর মহিলাদের হাড়ে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ কমতে শুরু করে। হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। রোজকার ডায়েটে ফাইটোইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ সয়াপ্রোটিন থাকলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি কমে যায়। ইংল্যান্ডের হাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’বছর ধরে ২০০০ পরিসংখ্যান নেওয়া হয়। সদ্য ঋতুনিবৃত্তি হয়েছে এমন মহিলাদের নিয়ম করে ৩০ গ্রাম (৬৬ মিলিগ্রাম সয়া প্রোটিন যুক্ত) সয়াবিন টানা ৬ মাস খাওয়ানোর পর, রক্ত পরীক্ষা করে এমন এক মার্কার পাওয়া গিয়েছে, যা অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যাকে অনেকটা প্রতিহত করতে পারে। গবেষকদলের প্রধান থোজুকাত সাথ্যপালন তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, শুধুমাত্র অস্টিওপোরোসিসের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের হাড় ভাঙে। তাঁরা প্রায় পঙ্গু জীবনযাপন করতে বাধ্য হন।শুধুমাত্র সয়া প্রোটিন ডায়েট দিয়ে এই সমস্যা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি দরকার যোগাসন বা ব্যায়াম। 
রক্ত চলাচলের সাহায্য
ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ জানালেন, সয়াবিনে আছে আইসোফ্ল্যাভেন ও লেসিথিন। দু’টিই জোরালো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এগুলো লো ডেনসিটি কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্যে করে। এলডিএল অর্থাৎ লোডেনসিটি কোলেস্টেরল অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ধমণির মধ্যে কোলেস্টেরলের পলি জমিয়ে রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয় এই এলডিএল। সয়াবিনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এই সমস্যার মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে বলে জানাচ্ছেন ইন্দ্রাণী।
অকালবার্ধক্য রোধ
সয়াবিনের আইসোফ্ল্যাভেন অত্যন্ত জোরালো ফাইটো ইস্ট্রোজেন। ত্বক ও চুল উজ্জ্বল ও ঝকঝকে রাখতে এই যৌগ সাহায্য করে। সয়াবিনে থাকা লেসিথিন রক্তচাপ স্বাভাবিক রেখে হার্ট ও মস্তিষ্ককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এতে অকালবার্ধক্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, বলছেন ইন্দ্রাণী। সয়াবিনের লেথিসিন ফ্যাট মেটাবলিজিম বাড়াতে সাহায্য করে। তাতে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অন্যান্য উপকার
সপ্তাহে দিন তিনেক ৫০ মিলিগ্রাম করে সয়াবিন খেলে এইচডিএল এবং এলডিএলের ভারসাম্য রক্ষা হয়। ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে। ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, খাবার পরিপাকের সময় সয়া-প্রোটিন নামে এক যৌগ তৈরি হয়, যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্যে করে। সয়া-ফাইবার রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। ইন্দ্রাণী জানালেন, ‘‘সয়াবিনে আছে ফাইটিক অ্যাসিড, স্যাপোনিন, আইসোফ্ল্যাভেন ও আরও নানা পুষ্টিকর উপাদান। এগুলির প্রতিটিই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।’’
তবে অতিরিক্ত সয়াবিনের ক্ষতিকারক দিকও আছে। সুবর্ণা বললেন, ‘‘৫০ গ্রামের বেশি সয়াবিন খাওয়া ঠিক নয়। অনেকেরই বেশি সয়াবিন হজমে সমস্যা হয়। তবে সয়া মিল্ক প্রতি দিনই খাওয়া যায়। যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, দুধ খেলে হজমের অসুবিধা হয়, তাঁরা প্রতি দিনই সয়া মিল্ক খেতে পারেন।’’ তাঁর মতে, বাচ্চাদের জন্যও সয়া মিল্ক অত্যন্ত পুষ্টিকর। টাটকা বিনস রাখুন রোজকার ডায়েটে, পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। সপ্তাহে অন্তত দিন তিনেক সয়াবিন খেলে অনেক অসুখ অনায়াসে প্রতিরোধ করা যায় বলে তাঁর মত।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours