বছরদশেকের বালককে বাঁচাতে মরণপণ লড়াই চালালেন ১১জন ডাক্তার। এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারের অপারেশন থিয়েটারে। প্রায় ১৩ ঘণ্টার অপারেশন। শেষমেশ জোড়া দেওয়া গেল কব্জি থেকে ছিঁড়ে পড়া হাত। তবে তা ঠিকঠাক জোড়া লাগল কিনা, জানতে দিনদশেক অপেক্ষা করতে হবে।

উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম এলাকার রোহন্ডা গ্রামের বাসিন্দা আকাশ ওঁরাও। ৬ নভেম্বর বিকেলের দিকে আকাশ খেলছিল। কাছাকাছি একটি জেনারেটর চলছিল। কোনও ভাবে জেনারেটরের কনভেয়ার বেল্টে জড়িয়ে যায় আকাশের ডান হাত। চোখের নিমেষে কব্জি থেকে হাতটি ছিঁড়ে পড়ে।

বাড়ির লোকজন ভয় না পেয়ে, পরিষ্কার একটি পলিথিন প্যাকেট ছিন্ন হাতের অংশ বরফে মুড়ে ছোটেন এসএসকেএম হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। পৌঁছন ঘণ্টাদু'য়েকের মধ্যেই। তখন বিকেল পাঁচটা। শুরু হয় চিকিৎসা। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক গৌতম গুহের নেতৃত্বে ১১ জন চিকিৎসকের দল শুরু করেন অপারেশন। গৌতমবাবু ছাড়াও ছিলেন সন্দীপ বসু, সৌম্য গায়েন, সুশোভন সাহা, প্রীতম দাস,  ফাসাহাত হোসেন, ভিনীত রঞ্জন, রবি বিলুনিয়া, মেখলা এবং চন্দ্রিকা ভট্টাচার্য। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সন্ধেয় শুরু হয়ে পরের দিন সকাল পর্যন্ত চলে অপারেশন।

ঘটনাটি সব দিক থেকেই আগাগোড়া দৃষ্টান্তমূলক। এক, অতি জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন। সেটি প্রাথমিক ভাবে যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গেই করা হল। দ্বিতীয় বিষয় হল, এ ক্ষেত্রে করোনা প্রোটোকল না মানা। 

করোনা-পর্বে আর যা কিছু হোক, করোনাসংক্রান্ত সুরক্ষাবিধিতে কোনও শৈথিল্যই বরদাস্ত করা হচ্ছে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটাও করা হল। জেনেশুনেই করা হল। করা হল বালকের শরীরের খাতিরে। হাতের জন্য। 

অপারেশনের পরে জানা গেল, আকাশ করোনা আক্রান্ত। আসলে ওর প্রাণ বাঁচাতেই কোনও করোনা পরীক্ষা না করেই অপারেশন থিয়েটারে ছুটেছিল চিকিৎসকের দল। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী অপারেশনের আগে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ছেলেটির হাত জোড়া লাগানোই ছিল মূল লক্ষ্য। আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিই, যেভাবেই হোক ছেলেটিকে বাঁচাতে হবে। হাতটাকে জোড়া লাগাতে হবে। সময় খুব অল্প। গোল্ডেন টাইম নষ্ট করা যাবে না।' 

অপারেশনের পরে আকাশকে রেখে দেওয়া হয়েছিল ট্রমা কেয়ার সেন্টারেই। কিন্তু আকাশের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ায় তাকে রবিবার কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। 

কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে 'মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে'র নীচের তলায় চিকিৎসাধীন আকাশ। কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, 'সব রকম ভাবে নজর রাখা হচ্ছে। যে রকম চিকিৎসা প্রয়োজন সেই চিকিৎসাই এখানে পাবে আকাশ। চিকিৎসকেরা গোটা বিষয়টি নজরে রেখেছেন।'

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours