জুন মাসে মাত্র ৪০ দিনের ছুটিতে নদীয়ার তেহট্টে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন সুবোধ ঘোষ। কিন্তু তখন সারা দেশে করোনা লকডাউন। ফলে ছুটির সময়টাতে আর কারও সঙ্গে দেখা, আড্ডা হয়নি। ছিলেন কোয়ারেন্টাইনে তাই আত্মীয়দের কথা দিয়েছিলেন, ডিসেম্বরে আবার আসব। তখন তোমাদের সবার সঙ্গে দেখা হবে। নভেম্বর মাসেই বাড়ি ফিরবেন সুবোধ। কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে। সীমান্তে পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন যেন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার পাকিস্তানি সেনার কাপুরুষোচিত আক্রমণে শহিদ হয়েছেন ভারতীয় সেনার জওয়ান সুবোধ ঘোষ। নদীয়ার তেহট্টের রঘুনাথপুরের মানুষরা গ্রামের ছেলের এভাবে চলে যাওয়া যেন মেনে নিতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবারও সুবোধের সঙ্গে কথা হয়েছিল মা ও স্ত্রীর। কিন্তু শুক্রবার সারাদিন কথা হয়নি। মা ও স্ত্রী বারবার ফোন করছিলেন। কিন্তু সুবোধের ফোন সুইচ অফ ছিল। শুক্রবার বিকেলে সেনাবাহিনীর তরফে ফোন করে জানানো হয়, সুবোধ শহিদ হয়েছেন। আকাশ ভেঙে পড়ে প্রিয়জনদের মাথার উপর। একদিন আগেও তো কথা হয়েছিল ছেলের সঙ্গে। জুন মাসে ছুটি বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন সুবোধ। কিন্তু হয়নি। ফলে আবার বাহিনীতে যোগ দেন। ডিসেম্বরে ফেরার কথা দিয়েও রাখতে পারলেন না বছর ২৪-এর সুবোধ। কফিনবন্দি হয়েই বাড়ির উঠোনে ফিরবেন তিনি।

বছর চারেক আগে ভারতীয় সেনায় যোগ দেন সুবোধ। বিয়ে করেছিলেন তিন বছর আগে। তিন মাসের কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁর। বাবার সহচর্য কী, সেটা আর বোঝা হবে না ছোট্ট মেয়ের। ইদানিং মেয়ের শরীরটা ভাল ছিল না বলে বারবার ফোন করতেন সুবোধ। স্ত্রী, মেয়ে, মা ও বাড়ির সবার খবর রাখতেন নিয়মিত। সুবোধের স্ত্রী অনিন্দিতা কিছুতেই স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। দীপাবলির আনন্দ যেন রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে উধাও হয়েছে এবার। আলোর উত্সবের মাঝেও অন্ধকার ছেয়ে ফেলেছে ঘোষ বাড়ির উঠোন। তবে দেশবাসীর মনে নিশ্চয়ই অমর হয়ে থাকবেন নদীয়ার সুবোধ ঘোষ। দেশের জন্য তাঁর আত্মবলিদান ব্যর্থ হবে না।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours