ভারত-বাংলাদেশের বিস্তৃত জলসীমানায় জঙ্গী অনুপ্রবেশ, চোরাচালান থেকে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র পাচার রুখে দিয়েছে উপকূলরক্ষীবাহিনী।পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া লাখে লাখে মৎস্যজীবীদের জীবন সুরক্ষায় একমাত্র ভরসাও তারা। কিন্তু সামরিক বাহিনীর সেই উইং এর পূর্বাঞ্চলীয় স্থায়ী ডেরা এখনও হল না। বকখালির ফ্রেজারগঞ্জে জমি চিহ্নিত করে রাজ্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিলেও আমলাতান্ত্রিক লালফিতের ফাঁসে আটকে রয়েছে। ফলে খুবই অসুবিধার মধ্যে হোটেল ভাড়া করে দিনের পর দিন উপকূলরক্ষীবাহিনীর
পূর্বাঞ্চলীয় অফিস চালাতে হচ্ছে। সেটা একমাস নয়, ছ’ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বাহিনীর জওয়ানদের আক্ষেপ, ভারত-বাংলাদেশ জলসীমার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে নজরদারির পাশাপাশি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবন সহ এই জেলায় ধারাবাহিক দুর্যোগের মোকাবিলা ও মৎস্যজীবীদের জীবন রক্ষায় তাঁরা সদা তৎপর। কিন্তু তাঁদের স্থায়ী আস্তানা করে দেওয়ার বিষয়ে সরকারিস্তরে সেভাবে সক্রিয় নয়। এমন চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে উপকূলরক্ষী বাহিনীর এই অংশকে ওড়িষ্যার গোপালপুরে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। কারণ, ইতিমধ্যে ওড়িষ্যার সরকার এমন একটি প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ওই বাহিনীকে দিয়েছে। এক সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের ভারত-বাংলাদেশ জলসীমানায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর নজরদারি এখনকার মতো সক্রিয় ছিল না। কারণ, সেই সময় এই বাহিনী হলদিয়াতে থাকত। ফলে ভারত-বাংলাদেশ জলসীমানায় নজরদারিতে যথেষ্ট ফাঁক থাকত। সেই সুযোগ নিয়ে চোরাচালান, অস্ত্রপাচার থেকে অনুপ্রবেশ চলত। বাংলাদেশ থেকে একাধিকবার জঙ্গীদের অনুপ্রবেশও ঘটেছে। গভীর সমুদ্রে জলদস্যুদের হামলাও অব্যাহত ছিল। এছাড়া প্রতিবছর ট্রলারসহ মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্যোগের মধ্যে পড়লে তাদের উদ্ধারে অনেক সময় লেগে যেত। তখন সেই হলদিয়াতে উপকূলরক্ষীবাহিনীকে খবর দিতে হত। তাদের আসা-যাওয়াতে এতটাই সময় লাগত যে, ট্রলার ও মৎস্যজীবীদের অনেকক্ষেত্রেই বাঁচানো যেত না। পাকিস্তানি জঙ্গীরা সমুদ্রপথে মুম্বাই শহরে হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকার নড়েচড়ে বসে।রাজ্য সরকারও সতর্ক হয়। তারপর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভারত-বাংলাদেশ এর এই জলসীমানা ও সমুদ্রে নজরদারি আরও বাড়াতে বকখালির ফ্রেজারগঞ্জে উপকূলরক্ষী বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় করার উদ্যোগ হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে সাত বছর আগে ফ্রেজারগঞ্জ এ একটি হোটেলে অস্থায়ী অফিস খোলা হয়। প্রতিমাসে এক লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৪০ জন জওয়ান ও আরও অফিসার মিলিয়ে ৫০ জনের বেশি কর্মচারী নিয়ে খুবই অসুবিধার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, চার বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স এর পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের মাধ্যমে এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব আসে।তাতে বলা হয়, ফ্রেজারগঞ্জ এ উপকূলরক্ষীবাহীনর পূর্বাঞ্চলীয় অফিস করার জন্য ৯. ২ একর ( ৯ বিঘার বেশি) জমির প্রয়োজন। সেখানে বড় অফিস ছাড়াও উপকূলরক্ষীবাহিনীর দু’টি হোভারক্রাফট জলযান থাকবে। সব মিলিয়ে ৫০ কোটির উপর প্রজেক্ট প্রায়। একলপ্তে সরকারি অতটা জমি পাওয়া সহজ ছিল না। যদিও বা পাওয়া গেল তাতে অনেক দখলদার ছিল। স্বাভাবিকভাবে সেই দখল সরিয়ে পুরো জমি ফাঁকা করতে সময় লেগে গিয়েছে।এরপর রাজ্য সরকারের হাত থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিফেন্স এর নামে করার প্রক্রিয়া সহ নথিপত্র তৈরি পর উপরতলায় পাঠানো হয়। তাতে জমির মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আড়াই বছর আগে সেই ফাইল রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কারের কাছে জমা পড়ে। কিন্তু এখনও হল না কেন? দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, টেকনিক্যাল একটা সমস্যা ছিল। উপর থেকে সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল।সম্প্রতি তা সংশোধন করে ফের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours