কর্নেল সন্তোষ বাবু লুটিয়ে পড়তেই প্রবল আক্রোশে প্রতিপক্ষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা৷
#লাদাখ: ১৫ জুন রাতে কীভাবে লাদাখে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল? ভারতীয় সেনারাই বা কীভাবে ১৪ নম্বর প্যাট্রলিং পয়েন্ট থেকে চিনের পোস্ট সরিয়ে দিয়েছিল? সংবাদসংস্থা এএনআই-এর দাবি অনুযায়ী, প্রথমে চিনা সেনাদের ওই পোস্ট সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধই করেছিল ভারতীয় সেনা৷ কিন্তু দু' পক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের মধ্যেই তাঁদের উপরে পূর্ব পরিকল্পিত আক্রমণ চালায় চিনা সেনারা৷
১৫ তারিখ কী হয়েছিল, গোটা ঘটনাক্রম তুলে ধরেছে সংবাদসংস্থা এএনআই৷ সংবাদসংস্থার দাবি অনুযায়ী ১৫ জুন বিকেলে ভারতীয় সেনার সিনিয়র অফিসাররা শাইয়ক এবং গালওয়ান নদীর সংযোগস্থলে Y পয়েন্টে উপস্থিত হন৷ সেখানেই চিনা বাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হওয়ার কথা ছিল৷
সূত্রের খবর, ১৬ নম্বর বিহার রেজিমেন্টের সহ ভারতীয় সেনা জওয়ানদের নির্দেশ দেওয়া হয়, চিনের সেনাবাহিনী যাতে ১৪ নম্বর প্যাট্রলিং পয়েন্ট থেকে তাদের পোস্ট সরিয়ে নেয়, তা নিশ্চিত করতে৷ এর পর ওই পোস্ট সরিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়ে একটি ছোট নজরদারি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়৷
চিনের ওই নজরদারি পোস্টে সেই সময় ১০ থেকে ১২ জন সৈন্য ছিল৷ ভারতীয় বাহিনীর জওয়ানরা দুই দেশের সেনা কর্তাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিনা সেনাদের ওই পোস্ট সরিয়ে নিতে বলেন৷ যদিও চিনা সেনারা তাতে রাজি হয়নি৷ ভারতের ওই নজরদারি দলটি সঙ্গে সঙ্গে এই খবর দিতে নিজেদের ইউনিটে ফিরে আসে৷
এর পরেই ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল সন্তোষ বাবুর নেতৃত্বে ৫০ জন সেনা জওয়ানের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে চিনা সেনাদের ফের ভারতীয় এলাকা ছেড়ে নিজেদের এলাকায় ফেরার কথা বলে৷
সংবাদসংস্থার দাবি অনুযায়ী, ভারতীয় সেনার প্রথম নজরদারি দলটি যখন ফিরে এসেছিল সেই ফাঁকে খবর পাঠিয়ে নিজেদের ঘাঁটি থেকে আরও ২৫০ থেকে ৩০০ সেনাকে ঘটনাস্থলে জড়ো করে ফেলেছিল চিনা বাহিনী৷ ওই নজরদারি পোস্টের চারপাশে উঁচু জায়গাগুলিতে তারা ভারতীয় সেনাদের উপরে আক্রমণের জন্য লুকিয়ে ছিল৷
পোস্ট সরানো নিয়ে কর্নেল সন্তোষ বাবুর নেতৃত্বে থাকা বিহার রেজিমেন্টের সৈন্যদের সঙ্গে চিনা ফৌজের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়৷ তার মধ্যেই চিনা বাহিনীর তাঁবু উপড়ে ফেলতে শুরু করে ভারতীয় সেনারা৷ অভিযোগ, তখনই ভারতীয় সেনাদের উপরে আক্রমণ করে ঘাপটি মেরে থাকা চিনা সেনারা৷ প্রথমে কর্নেল সন্তোষ বাবু এবং হাবিলদার পালানির উপরে হামলা চালানো হয়৷ কর্নেল সন্তোষ বাবু লুটিয়ে পড়তেই প্রবল আক্রোশে প্রতিপক্ষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা৷ প্রতিপক্ষ সংখ্যায় বেশি হওয়া এবং উপর থেকে পাথর বৃষ্টি সত্ত্বেও চিনা সেনাদের ঘায়েল করতে শুরু করেন ভারতীয় জওয়ানরা৷
সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে৷ ঘটনাস্থলেই চিনা বাহিনীর একাধিক সেনা মৃত অথবা গুরুতর আহত অবস্থায় পড়েছিল৷
পরের দিন সকালে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে চিনা সেনাদের মৃতদেহ প্রতিপক্ষকে ফেরত দেওয়া হয়৷ ভারতীয় সেনার অন্তত ১০০ জন জওয়ান এই উদ্ধারকাজে অংশ নেন৷ সেই সময় চিনের প্রায় ৩৫০ সেনা ঘটনাস্থলে ছিল৷ ততক্ষণে অবশ্য ভারতীয় বাহিনী চিনা সেনাদের ১৪ নম্বর প্যাট্রোলিং পয়েন্ট থেকে সরিয়ে দিয়েছে৷
এই ঘটনার পর পরই ওই এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে নিজেদের প্রচুর বাহিনী মোতায়েন করে ফেলে চিন৷
সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা দাবি করেছে, প্রতিপক্ষের থেকে সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও চিনা সেনাদের পোস্ট সরিয়ে দিতে সক্ষম হয় বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা৷ সেনা সূত্রের দাবি, দু' দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির খেলাপ করে ওই পোস্ট তৈরি করেছিল চিন৷
সংবাদসংস্থা আরও জানিয়েছে, প্যাট্রিলং পয়েন্ট ১৪, ১৫ এবং ১৭এ-তে দু' পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আগামী কয়েকদিনে দুই দেশের লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের অফিসারদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হওয়ার কথা৷

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours