তৃণমূল সুপ্রিমোর এই একা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীকেও। আর সেই প্রশ্ন শুনে বেজায় ক্ষুব্ধ অধীরবাবু। তবে প্রদেশ নেতার কথাবার্তা শুনে মনে হল, ক্ষোভটা যতটা না মমতাদের প্রতি, তার থেকে বেশি হয়ত কংগ্রেস হাইকমান্ডের ভাবগতিক নিয়ে।

 একাই লড়ার সিদ্ধান্ত মমতার, প্রশ্ন শুনেই বেজায় ক্ষুব্ধ অধীর
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অধীররঞ্জন চৌধুরী


লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্টই এখনও ঘোষণা হল না। তার আগেই কি ‘ঘেঁটে ঘ’ বিরোধীদের সাধের ইন্ডিয়া জোট? অন্তত বাংলার প্রাদেশিক রাজনীতির সমীকরণ দেখে তেমনই টিপ্পনি করছেন বিরোধীদের কেউ কেউ। আজ যেমন একেবারে সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা, একা লড়ার সিদ্ধান্তের কথা। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে অবশ্য কী হবে না হবে, সেটা ভোটের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মমতা।


তৃণমূল সুপ্রিমোর এই একা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীকেও। আর সেই প্রশ্ন শুনে বেজায় ক্ষুব্ধ অধীরবাবু। তবে প্রদেশ নেতার কথাবার্তা শুনে মনে হল, ক্ষোভটা যতটা না মমতাদের প্রতি, তার থেকে বেশি হয়ত কংগ্রেস হাইকমান্ডের ভাবগতিক নিয়ে। আজ প্রশ্ন শুনেই অধীর বললেন, ‘ওটা মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন, আমার সাবজেক্ট নয়।’ কিছুটা এড়িয়ে যাওয়ারই চেষ্টা করলেন সংবাদমাধ্যমকে। এরপর আবারও একই প্রশ্ন করা হলে কিছুটা শ্লেষমিশ্রিত গলায়, ‘আমি জানি না এসব। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির নেতারা আছেন। তাঁদের জিজ্ঞেস করুন।’

ইন্ডিয়া জোটের ভবিতব্য বাংলায় কী হতে চলেছে, তা নিয়ে অনেকদিন ধরেই জলঘোলা চলছিল। মাঝে শোনা যাচ্ছিল, কংগ্রেসকে নাকি দু’টি আসন ছাড়তে রাজি ছিল তৃণমূল (বর্তমানে বাংলা থেকে কংগ্রেসের লোকসভা সাংসদ রয়েছেন দু’জনই)। সূত্রের খবর, গতকাল কালীঘাটের বৈঠকেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। তখনও দলীয় নেতৃত্বের বার্তা ছিল, কংগ্রেস খেয়ালখুশি মতো আসন দাবি করছে, কিন্তু দু’টি আসনের বেশি কংগ্রেসকে ছাড়া হবে না। সূত্রের খবর তেমনই।


এই নিয়ে যখন বিতর্ক, বিশ্লেষণ চলছে, তখন বুধবার কোনও রাখঢাক না রেখেই মমতা সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়ে দিলেন, বাংলায় দলের একা লড়ার সিদ্ধান্তের কথা।

ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম বড় দল কংগ্রেস। ভোটের মুখে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস আবার গোটা দেশে ঘুরছে। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা চলছে রাহুলের নেতৃত্বে। সেই কর্মসূচিতে আগামিকালই বাংলায় ঢোকার কথা রাহুলদের। কিন্তু সেই বিষয়েও ইন্ডিয়ার ‘বন্ধু’ দল তৃণমূলকে কিছুই জানানো হয়নি কংগ্রেসের তরফে, দাবি মমতার। আজ সেই নিয়েও মুখ খোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, ‘জোটের শরিক হিসেবে সৌজন্যের খাতিরেও তো জানাতে পারত, দিদি আপনার রাজ্যে যাচ্ছি। না জানায়নি।’

এদিকে কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে মমতার এদিনের মন্তব্যের পরেই তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে কংগ্রেস শিবিরও। জয়রাম রমেশ যেমন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘মমতাজিকে ছাড়া আমরা ইন্ডিয়া জোট কল্পনাও করতে পারি না।’ তাঁর বক্তব্য, মমতা চাইছেন বিজেপিকে হারাতে। সেই ভাবনা নিয়েই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা বাংলায় ঢুকবে। জয়রাম রমেশের কথায়, ‘পথ লম্বা হলে, কখনও রাস্তায় স্পিড ব্রেকার আসবে, ট্র্যাফিক সিগনাল লাল হবে। কিন্তু তার মানে এটা নয় আমরা পথ চলা বন্ধ করে দেব।’

প্রথমে তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, তারপর সঙ্গে সঙ্গে জয়রাম রমেশের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে এই ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা। এসব দেখেই কি কিছুটা বিরক্ত হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী? কারণ, অতীতে তিনি বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের অবস্থানের কথা। কখনও বলেছেন, ‘দু’টি আসনের দয়া চান না।’ আবার কখনও মমতাকে বহরমপুরে এসে ভোটে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। এদিকে আবার বাংলায় অধীরদের ‘বন্ধু’ সেলিমেদের দিক থেকেও স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। এই চক্রব্যূহের মধ্যে কি অস্বস্তি আরও বাড়ছে অধীরের? তারই কি একটি বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল আজ? তাই কি সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা?


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours