আশঙ্কা সত্যি হল। লেগে গিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার। শুরু যুদ্ধ। ইউক্রেনের একাধিক সহরে রুশ বাহিনীর হামলা। ইউক্রেনের একের পর শহরে শোনা যাচ্ছে গোলার শব্দ।

কিয়েভ-সহ বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে খারকিভ-সহ ইউক্রেনের অন্যান্য শহরগুলো থেকেও। রাশিয়ার বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন, জখম বহু। যুদ্ধের শহরে সকলে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। কে-ই বা সে খবর রাখে! রাশিয়ার বিমান হানায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে খারকিভের একের পর এক বহুতল। ইউক্রেনের একাধিক বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ধ্বংস করে দিয়েছে অস্ত্রাগার। লুহানস্কের স্কাত্সিয়া, স্ট্যানিত্সিয়া শহর দখল করে নিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। ক্রিমিয়া, বেলারুশ, রাশিয়া সীমান্তের পাশাপাশি আকাশপথেও হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
মস্কোর ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে কিয়েভে। পালটা মার দিচ্ছে ইউক্রেনও (Ukraine)। রুশ (Russia) বিমান ও হেলিকপ্টারকে গুলি করে নামাতে দেখা গিয়েছে তাদের। সব মিলিয়ে বাড়ছে চাঞ্চল্য।

কিন্তু কেন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধাল রাশিয়া? দেখে নেওয়া যাক সম্ভাব্য কিছু কারণ এক নজরে:

১) গত কয়েক বছর ধরেই পূর্ব ইউক্রেনে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে ‘রাশিয়ার মদতপুষ্ট’ বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুতর হয়ে ওঠে ২০১৪ সালের পর থেকে। সেবারের নির্বাচনে ইউক্রেনের নাগরিকরা রুশপন্থী এক নেতাকে দেশের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরিয়ে দেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। ব্যাপারটা একেবারেই ভালভাবে নেয়নি রাশিয়া। ক্রিমিয়া দখল করে মস্কো। বলা যায়, তখন থেকেই রাশিয়ার ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে।

২) এরপরই রাশিয়ার উপরে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা। কিন্তু রাশিয়া তাদের ‘রণং দেহি’ হাবভাব বদলানোর কোনও চেষ্টাই করেনি। উলটে নতুন করে মদত জুগিয়ে গিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। সেই বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যই ছিল পূর্ব ইউক্রেনকে দখল করে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা। যা দেখে অসন্তোষ বাড়তে ইউক্রেন সরকারের। এরপরই তারা দ্বারস্থ হয় ন্যাটোর। আর এখান থেকেই ব্যাপারটা এক অন্য দিকে বাঁক নেয়।

৩) যত বেশি ন্যাটোর সঙ্গে আলোচনা এগিয়েছে ইউক্রেনের, ততই ক্ষোভ বেড়েছে রাশিয়ার। গত কয়েক বছরে ইউক্রেনের সেনা ও রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর ততই স্পষ্ট হয়েছে যুদ্ধের আশঙ্কা।





৪)রাশিয়া দাবি করছে, পশ্চিমা দেশ গুলি বিশেষত আমেরিকা একটি আইনত বাধ্যতামূলক গ্যারান্টি দেয় নি যে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ এবং ইউক্রেনে কোনও সামরিক তৎপরতা জারি করবে না। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতে, ইউক্রেন পশ্চিমের একটা পুতুল মাত্র, এটি কখনই একটি সঠিক রাষ্ট্র ছিল না।

৫) আসলে রাশিয়া বরাবরই strategic depth-কে কাজে লাগিয়ে শত্রুবাহিনীকে বেকায়দায় ফেলেছে। কী এই কৌশল? ভৌগলিক দিক থেকে শত্রুদের কাছে রাশিয়া বরাবরই কঠিন ঠাঁই। দেশটাও বিরাট বড়। প্রতিপক্ষ যদি কোনও ভাবে রাশিয়ায় ঢুকেও পড়ে সেক্ষেত্রে শস্যে আগুন লাগিয়ে ক্রমে পিছিয়ে যেতে থাকে লালফৌজ। প্রতিরক্ষার কৌশলগত কারণেই ইউক্রেন দখল করে পূর্ব ইউরোপ ও নিজেদের মধ্যে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই কারণেই যেনতেন প্রকারেণ ইউক্রেনকে দখলে রাখতে চায় রাশিয়া।

৬) গত কয়েক বছর ধরে ক্রমেই বেড়েছে দুই দেশের সম্পর্কের উত্তাপ। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন। কিন্তু পুতিনও পালটা জবাব দিয়েছিলেন। গত সোমবারই ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তখন থেকেই যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছিল।

অবশেষে সব আশঙ্কা সত্যি করে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের উপরে হামলা চালাল রাশিয়া। বেজে গেল যুদ্ধের ডঙ্কা।



সমস্ত তথ্য -   তৌসিফ এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, সংবাদ প্রতিদিন



Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours