সংগ্রহ  FACBOOK  FROM  ATANU 
ভারতের প্রসিদ্ধ কালীক্ষেত্রগুলির মধ্যে দক্ষিণেশ্বর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই মন্দিরের দেবী কালী "ভবতারিণী" নামে পূজিত হন। শ্রীরামকৃষ্ণ-রাণী রাসমণির স্মৃতি বিজড়িত দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির হিন্দুদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
কলকাতার নিকটবর্তী উত্তর ২৪ পরগণার কামারহাটি শহরের প্রান্তে হুগলি নদীর তীরে এই মন্দিরটি অবস্থিত। ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ৩১শে মে মানবদরদী বিধবা জমিদারপত্নী রাণী রাসমণি কতৃর্ক দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। কথিত আছে, তীর্থযাত্রা উপলক্ষ্যে কাশী যাবার পূর্ব্বে রাণী রাসমণি জগজ্জননী মহাকালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে গঙ্গাতীরে এই সুবিশাল মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে শুরু হয়ে মন্দিরের নির্ম্মানকার্য সম্পূর্ণ হয় ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে।

রাণী রাসমণির দলিল থেকে জানা যায়, ১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্টের এটর্ণী হেস্টিং সাহেবের দক্ষিণেশ্বরের ৬০ বিঘা জমি ৫৫ হাজার টাকায় খরিদ করা হয়। মন্দিরের নকশা, পরিকল্পনা ও নির্ম্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিলেতের ম্যাকিন্টস বার্ন কোম্পানীকে। দীর্ঘ আট বছরের পরিশ্রমে নয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্ম্মিত হয় এই সুরম্য মন্দির।

গঙ্গাতীরে মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হল নবরত্ন চূড়া কালীমন্দির। তারই পাশে রাধাকৃষ্ণের মন্দির ও দ্বাদশ শিব মন্দির। দক্ষিণ দিক থেকে বারোটি শিবলিঙ্গের নামকরণ করা হল: যজ্ঞেশ্বর, জলেশ্বর, জগদীশ্বর, নাদেশ্বর, নন্দীশ্বর, নরেশ্বর, যোগেশ্বর, যত্নেশ্বর, জটিলেশ্বর, নকুলেশ্বর, নাগেশ্বর ও নির্জরেশ্বর।


যে-সময়ে এই মন্দিরটি নির্মিত হয় সে-সময়ে বাঙলার মন্দিরের সূত্রধর, শিল্পী সব অবলুপ্তির পথে। মূল মন্দিরের স্থাপত্য, মনোমুগ্ধকারী গঠননৈপুণ্য ও বিন্যাস-লালিত্যের অন্তরালে কোন স্থপতির প্রতিভা সেদিন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল তার পরিচয় জানা যায় না।

সমস্ত কাজ সমাপ্ত হলে উপযুক্ত দিনে মন্দির প্রতিষ্ঠা ও দেবীকে অন্নভোগ দেওয়ায় যখন রাণী রাসমনি সচেষ্ট তখনই তিনি কঠিন বাধার সম্মুখীন হলেন। রাণী জাতিতে কৈবর্ত হওয়ায় সামাজিক প্রথা অনুযায়ী কোনো ব্রাহ্মণ দেবীকে অন্নভোগ দিতে রাজী ছিলেন না। তখন কলকাতার ঝামাপুকুর চতুষ্পাঠীর পণ্ডিত রামকুমার চট্টোপাধ্যায় তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধরকে (শ্রীরামকৃষ্ণ) নিয়ে ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ৩১শে মে স্নানযাত্রার পুণ্য তিথিতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে যখন চারিদিকে অবক্ষয়ের চূড়ান্ত, সেখানে একটি সাম্যের বাতাবরণ রচনা করেছিলেন রাণী রাসমণি। তিনি শ্যামার পাশে বসালেন শ্যামকে, বসালেন দেবাদিদেব মহাদেবকেও। শৈব-শাক্ত-বৈষ্ণবদের মধ্যের দূরত্ব নিবারণের যে প্রচেষ্টা রাসমণি শুরু করেছিলেন তার প্রচার কাজ চালালেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ স্বয়ং এবং সেই বার্তাকে বিশ্বজনীন করে তুললেন বিবেকানন্দ।




























Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours