দু'বছরের মধ্যেই আবার হারানো জমি ফিরে পেল তৃণমূল। উপনির্বাচনে উড়ল সবুজ আবির। কোন মন্ত্রে এই হারানো জমি পুনরুদ্ধার হল ঘাসফুলের? উপনির্বাচনে পদ্মকে দুরমুশ করে দেওয়া তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের ব্যাখ্যা, 'নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে হাতে না মেরে, ভাতে মারতে চেয়েছিল। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।'


ধূপগুড়ি: ধূপগুড়ির উপনির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের জন্যই একপ্রকার প্রেস্টিজ ফাইট হয়ে উঠেছিল। ২০১১ সালের পালাবদলের সময়েও এখানে লাল পতাকা উড়েছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এই ধূপগুড়ি যায় তৃণমূলের হাতে। তারপর আবার হাতবদল। একুশের বিধানসভায় তৃণমূলের থেকে ধূপগুড়ি ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। তবে দু’বছরের মধ্যেই আবার হারানো জমি ফিরে পেল তৃণমূল। উপনির্বাচনে উড়ল সবুজ আবির। কোন মন্ত্রে এই হারানো জমি পুনরুদ্ধার হল ঘাসফুলের? উপনির্বাচনে পদ্মকে দুরমুশ করে দেওয়া তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের ব্যাখ্যা, ‘নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডকে হাতে না মেরে, ভাতে মারতে চেয়েছিল। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’


রাজবংশী-মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের লিটমাস টেস্ট
লোকসভা ভোট শিয়রে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ধূপগুড়ির উপনির্বাচনের সাফল্য তৃণমূলকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণও রয়েছে। প্রথমত, রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ক। ধূপগুড়িতে রাজবংশী ভোটার প্রায় ৪৬ শতাংশ। দ্বিতীয়ত, মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। প্রায় ২৭ শতাংশ মতুয়া ভোটার রয়েছেন ধূপগুড়িতে। সেই জায়গায় উপনির্বাচনে ‘নির্মল’ জয়ে তৃণমূলকে অনেকটা ভরসা জোগাবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

কারণ, মাস কয়েক আগে উত্তরবঙ্গে এক রাজবংশী তরুণীর রহস্যমৃত্যু ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। তাতে আরও ঘৃতাহুতি পড়েছিল পুলিশের গুলিতে রাজবংশী যুবকের মৃত্যুর অভিযোগে। এমন অবস্থায় রাজবংশী ভোটব্যাঙ্কের উপর কতটা প্রভাব পড়ছে, তা যাচাই করার জন্য ধূপগুড়ির উপনির্বাচন ছিল শাসক দলের কাছে লিটমাস টেস্টের মতো। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গে কি মতুয়া ও রাজবংশী ভোটব্যাঙ্কে ধস নামবে শাসকের? সেই নিয়েও জোর চর্চা হয়েছে। খামতি রাখেনি বিরোধীরাও। রাজবংশী-মতুয়াদের নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, উপনির্বাচনের ফল থেকে আপাতভাবে এটাই স্পষ্ট, বিরোধীদের প্রচার শাসকের ভোটব্যাঙ্কে সেই অর্থে দাগ কাটতে পারেনি।


ধূপগুড়ির সাফল্যে ‘ইন্ডিয়া’র জয় দেখছে তৃণমূল
লোকসভার আগে ধূপগুড়ির এই সাফল্যের গুরুত্ব বিলক্ষণ বোঝেন তৃণমূল সুপ্রিমোও। ধূপগুড়ির জয় ‘ইন্ডিয়া’-র জয় বলেই মনে করছে শাসক দল। মমতাও ধূপগুড়ির জয়ে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘জয় বাংলা, জয় ইন্ডিয়া।’

ধরাশায়ী সাগরদিঘি মডেল
কিন্তু এর আগেও তো সাগরদিঘির উপনির্বাচনে অন্য চিত্র দেখা গিয়েছিল। তৃণমূলকে ধরাশায়ী করে বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস জয়ী হয়েছিলেন। বিধায়ক পদে শপথ নেওয়ার পর বাইরন অবশ্য যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। সেই সাগরদিঘিকে দেখেই কি ঠেকে শিখল ধূপগুড়ি? এমন প্রশ্নও উঠে আসতে শুরু করেছে। তাহলে কি বাম-কংগ্রেস যে সাগরদিঘি মডেলের কথা বলে আসছিল, তা বাংলার রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রমী সাফল্য হিসেবেই থেকে যাবে? ধূপগুড়িতে কার্যত দ্বিমুখী লড়াই দেখা গেল তৃণমূল আর বিজেপির। কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী ধারেকাছে ঘেঁষতে পারলেন না। যদিও ধূপগুড়ি নিয়ে অধীরবাবুর সাফাই, জোট হলেও বাম ও কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতা সেখানে রয়েছে। ধূপগুড়িতে তাঁরা জেতার জন্য মাঠে নামেননি বলেও দাবি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours