বম্বে হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট জেনারেল আশুতোষ কুম্ভকোনি রাজ্য সরকারের তরফে সাফাই দিয়ে বলেন, "দয়া করে ভাববেন না রাজ্যের রূপান্তরকামীদের সঙ্গে বিরোধিতা রয়েছে। রূপান্তরকামীরা আবেদনপত্রে নিজেদের ব্যক্তিগত ইচ্ছামতো পুরুষ বা নারী হিসাবে চিহ্নিত করতে পারেন।


বছর আগে রূপান্তরকামীদের অধিকার নিয়ে নির্দেশ দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পরও তা কার্যকর করতে কোনও পদক্ষেপই করেনি মহারাষ্ট্র সরকার। সাত বছর ধরেও সরকারের ‘ঘুম না ভাঙাতেই’ মহারাষ্ট্র সরকারকে তীব্র ভৎসর্না করল বম্বে হাইকোর্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি থেকে শুরু করে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ, রূপান্তরকামীদের অধিকারকে স্বীকৃতি না দেওয়া নিয়ে বম্বে হাইকোর্ট মহারাষ্ট্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করে।



মহারাষ্ট্র প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, স্বরাষ্ট্র দফতরে সমস্ত নিয়োগ পরীক্ষার আবেদনপত্রে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য একটি অপশন তৈরি করতে। এই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে আদালতে আবেদন করেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। বুধবার বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি অভয় আহুজার বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি চলছিল। হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, “সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও বিগত সাত বছর ধরে রাজ্য সরকার কিছু করেনি। আমাদের কেন এই কাজ করতে হবে? আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না আর নাগরিকদের আদালতে আসতে হয়।”

মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে হাইকোর্টে বলা হয়, রূপান্তরকামীদের বিরুদ্ধে তাদের কোনও সমস্যা নেই কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এখনও আলাদাভাবে কোনও নীতি নির্ধারণ করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র দফতরের নিয়োগের অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ অপশন তৈরি করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

আর্য বিজয় পুজারী নামক এক রূপান্তরকামী ব্যক্তিই আদালতে ‘তৃতীয় লিঙ্গের’ অপশনটি না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত ৬ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের সাঁতারা পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট পুলিশ কন্সটেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে পোষ্ট করেন। তা দেখে আর্য যখন আবেদন করতে যান, তখন দেখেন আবেদনপত্রে তৃতীয় লিঙ্গের কোনও অপশন নেই। তিনি ওই কলাম পূরণ না করায়, তার আবেদনপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়।

মহারাষ্ট্র সরকারের হয়ে আদালতে উপস্থিত অ্যাডভোকেট জেনারেল আশুতোষ কুম্ভকোনি রাজ্য সরকারের তরফে সাফাই দিয়ে বলেন, “দয়া করে ভাববেন না রাজ্যের রূপান্তরকামীদের সঙ্গে বিরোধিতা রয়েছে। সশস্ত্র কন্সটেবল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু পুরুষদেরই আবেদন করার অপশন রয়েছে। মহিলারাও এই পদে আবেদন করতে পারেন না।”

বম্বে হাইকোর্টে তিনি আরও জানান, রূপান্তরকামীরা আবেদনপত্রে নিজেদের ব্যক্তিগত ইচ্ছামতো পুরুষ বা নারী হিসাবে চিহ্নিত করতে পারেন। এরপরই প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, “২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বিগত ৭ বছর ধরে আপনাদের সরকার কিছু করেনি। সরকার গাঢ় ঘুমে রয়েছে। আপনারা (সরকার) নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না, সেই কারণে সাধারণ মানুষকে আদালতে আসতে হয়।”

মহারাষ্ট্র সরকারের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “১১টি রাজ্য তৃতীয় লিঙ্গের অপশন তৈরি করেছে। মহারাষ্ট্র সরকার সেই কাজ করেনি কেন? যদি সমাজের অগ্রগতি হতে পারে, তবে আইনের অগ্রগতি কেন হবে না? এইসব ঘটনার জন্যই আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। আদালতের নির্দেশ গ্রহণ করা হয় না কেন?”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours