নবান্নের ওই বৈঠক থেকে শহর কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় একাধিক ক্ষেত্রে কাজ নিয়ে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে প্রিন্সেপঘাটের সৌন্দর্যায়ন রক্ষা কিংবা রাস্তা পরিস্কার রাখার মতো বেশ কিছু প্রসঙ্গ উঠে আসে মমতার গলায়।


সোমবার রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নবান্নের ওই বৈঠক থেকে শহর কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় একাধিক ক্ষেত্রে কাজ নিয়ে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে প্রিন্সেপঘাটের সৌন্দর্যায়ন রক্ষা কিংবা রাস্তা পরিস্কার রাখার মতো বেশ কিছু প্রসঙ্গ উঠে আসে মমতার গলায়। এর পাশাপাশি রাজ্যের আগামী দিনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যা সব পরিকল্পনা রয়েছে, সেই কথাও তুলে ধরেন তিনি।



প্রিন্সেপঘাটে গঙ্গার ধারে সৌন্দর্যায়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে অনেক পদক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে প্রিন্সেপঘাটের অবস্থা নিয়ে খানিক বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “ক্যাওড়াতলা শ্মশানে মিউজিক সিস্টেম, বসার জায়গা করেছিলাম দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ থাকাকালীন। আমি এরকম চাই, ববি এখানে আছে, প্রিন্সেপ ঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। ওখানে পৌষমেলা হয়। কেন মেরামত হচ্ছে না? বলতে খারাপ লাগে। যেন বাচ্চা ছেলে, রোজ রোজ লালিপপ ধরিয়ে দেবে। কখনও অফিসার, মন্ত্রী, সরকার বদল হয়। কিন্তু নীতি তো বদল হয় না। কেন এটা নিয়মিত মনিটরিং হবে না? কলকাতার লোকেদের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। তাই এটা করেছিলাম।”
গঙ্গার ধারে সৌন্দর্যায়ন আরও বাড়াতে উত্তরভারতের বিভিন্ন তীর্থের মতো এখানেও গঙ্গাআরতির পরিকল্পনার কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “আমি চাই, গঙ্গা আরতির একটা জায়গা এখানে হোক। উত্তরপ্রদেশে বিভিন্ন জায়গায় হয়। আমিও এটা চাই। এমন এক জায়গায় করতে হবে, যেখানে বসার জায়গা আছে, লোক পড়ে যাবে না, মন্দির আছে, লোকে যেখানে শান্তির পীঠস্থান মনে করে, সেরকম একটা জায়গা দেখে এটা করার নির্দেশ দিচ্ছি কলকাতা পুরনিগমকে। দুই বছর লাগলেও ক্ষতি নেই।”
ফোরশোর রোডে আলো না জ্বলা নিয়েও বেশ বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, “পরিবহন দফতরের কেউ থাকলে মুখ্যসচিবকে বলছি, হাওড়ার দিক থেকে নবান্ন আসে, রাস্তার অবস্থা দেখ। কেন জল দিয়ে ধোয় না। আগে ধোওয়াত। এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেন আমাকে বলতে হবে? ফোরসোর রোডের আলো জ্বলছে না। এটা কার ডিউটি? আমার ডিউটি! পুরনিগম, মন্ত্রী, এসপি, ডিএম আছেন। কেন এটা হবে না! মন্ত্রীরা আসে যায়, কিন্তু দফতরের কাজ দেখতে হবে। আর কতবার বলব?”
 মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আমরা নিজেদের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকছি। সদর্থক চিন্তা করতে হবে। ডাক্তার অবসর করলেও আমরা রিঅ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে রেখে দিই। আমাদের ৬০০ আসন বেড়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান আরও উন্নত করতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তরে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১০ হাজার ১৭৩টি এবং ২৫-২৬ সালের মধ্যে ১৬ হাজার ৬১৬টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হবে। ৪ হাজার ৪৬১টি ইতিমধ্যে অনুমোদিত এবং ২ হাজারের বেশি চালু হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য আরও লোকের দোরগোড়ায় পৌঁছবে। বিনামূল্যে আউটডোর পরিষেবা, বিভিন্ন পরীক্ষা করা হবে। এখনও পর্যন্ত যা আছে, ১০ কোটি ৮০ লক্ষের বেশি আউটডোরে উপকৃত হয়েছে।”
 তিনি আরও বলেন, “এনসিডি আরও উন্নত করতে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীকে ৮ কোটি ৪৩ লক্ষ মানুষ নথিভুক্ত, প্রায় আড়াই হাজার হাসপাতালে পরিষেবা মিলছে। এখনও ৪৩ লাখ মানুষকে ৫ হাজার কোটি টাকার পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর আলাদা পোর্টাল খোলা হয়েছে।”
রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় রেফার রোগের যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমজনতাকে, সেই কথাও উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। বললেন, “জনগণের টাকায় জনগণের মূল্য দিতে হবে।” জেলার হাসপাতালগুলির উদ্দেশে তিনি বললেন, “আপনারা কি রেফার করা বন্ধ করবেন! গর্ভবতী মহিলাকেও রেফার করছেন। তারপর তারা গাড়ি জার্নি করে অন্যত্র এসে হাসপাতালে ভর্তি করতেই মৃত্যু হচ্ছে। কেন এটা হচ্ছে! এর দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। যদি এরকম হয়, তাহলে যে রেফার করেছে তাকে যে মারা গিয়েছে তার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে ভিডিয়োকলে জেলা হাসপাতালের সুপারের সাহায্য নিতে হবে।”
স্বাস্থ্য সচিবকে কিছুটা ধমক দিতেও দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতা বললেন, “কখনও আপনারা সারপ্রাইজ ভিজিট করেছেন? কখনও বাজারে যান। কখনও হাসপাতালে যান। আমাদের যেন গাফিলতি না হয়। গাফিলতি একটা অপরাধ। এটা অবিলম্বে আমাদের সংশোধন করেছি।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours