করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় অনেক দিন বন্ধ ছিল কালীঘাট মন্দির। আজ থেকে মন্দিরের গর্ভগৃহের দ্বার খুলে দেয়া হচ্ছে সর্বসাধাণের জন্য। কালীঘাট মন্দির অন্যতম একটি পীঠস্থান। প্রতিদিন প্রচুর ভক্তদের সমাগম হয় এখানে। জেনে নিন এই মন্দির স্থাপনের অসাধারণ ইতিহাস। যা জানলে আপনি অবাক হবেন।

লোকায়েত কাহিনী অনুযায়ী , রাজা দক্ষ এর যজ্ঞ স্থানে পতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেবী সতী দেহত্যাগ করেন। ক্ষুব্ধ শিব দেবী সতীর মৃতদেহকে কাঁধে নিয়ে চালান তাণ্ডব নৃত্য। দেবী সতীর শরীরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে । তার মধ্যে দেবীর ডান পায়ের চারটি মতান্তরে একটি আঙুল এসে পড়ে কালীঘাটে। দেবী সতীর একান্ন পীঠের মধ্যে কালীঘাট অন্যতম একটি পীঠ।

কালীঘাট মন্দিরে রয়েছে দশ কাঠা জায়গা জুড়ে কুন্দপুকুর । প্রচলিত আছে , এই পুকুরে এসেই দেবীর শরীরের অংশ পড়েছিল । তাই এই পুকুরের জলকে অতি পবিত্র মনে করা হয়। এই পুকুরের জল গঙ্গাজলতুল্য । মন্দিরটি দুশো বছরের পুরনো । এটি স্থাপন করেন হাটখোলার দত্ত পরিবারের কালীপ্রসাদ দত্ত এবং বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সন্তোষ রায়চৌধুরী।

মন্দির স্থাপনকে কেন্দ্র করে আরেকটি প্রচলিত গল্প রয়েছে। প্রাচীন কলকাতার চৌরঙ্গী অঞ্চলে ছিল বিরাট ঘন জঙ্গল । সেখানে থাকতেন এক সন্ন্যাসী। যাঁর নাম ছিল চৌরঙ্গী । পরবর্তীকালে সন্ন্যাসীর নাম অনুযায়ী চৌরঙ্গী রোড এর নামকরণ করা হয়। সন্ন্যাসী গঙ্গাসাগর যাওয়ার সময় দেবীর মূর্তি সাবর্ণ রায়চৌধুরী কে দিয়ে যান। অন্যদিকে এও বলা হয় হাজার বছর আগে গঙ্গাতীরে জঙ্গলে থাকতো আত্মারাম ব্রহ্মচারী নামক এক তান্ত্রিক। যিনি দেবীর মূর্তি দত্ত পরিবারকে দিয়ে গেছিলেন।

কাহিনী যাই থাকুক, প্রতিদিনই ভক্ত সমাগমে উপচে পড়ে কালীঘাটের মন্দির। মায়ের মূর্তির তলায় রয়েছে একটি বাক্স । তার মধ্যে আছে উজ্জ্বল রঙের পাথর। পাথরটিকে দেবীর অংশ বলে মনে করা হয়। প্রতিবছর একমাত্র স্নানযাত্রার সময় পাথরটিকে বার করা হয়। কালীঘাটে দেবীর মূর্তি কষ্টি পাথরে তৈরি এবং সজ্জিত হয়েছে সোনা ও রুপার অসাধারণ কাজে। ইংরেজ শাসন কালে ইউরোপীয়রাও আসত দেবী দর্শনে।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours