বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, "সব কিছু দেখে আমাদের কোন সন্দেহ নেই যে এক্ষেত্রে স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থার প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য সব সহযোগিতা করবে তদন্তকারী সংস্থাকে।"

HC On Sandeshkhali: সন্দেশখালি মামলায় CBI-কে সিট গঠনের নির্দেশ, সাহায্য করবে রাজ্য পুলিশ
সন্দেশখালি মামলায় CBI

কলকাতা: সন্দেশখালি মামলার তদন্ত করতে সিবিআই। জনস্বার্থ ও স্বতঃপ্রণোদিত মামলা, দুটো ক্ষেত্রেই সিবিআই-কে সিট গঠন করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে, সিবিআই-কে পোর্টাল তৈরি করতে হবে। জমি দখল , ধর্ষণ, চাষের জমিতে ভেড়িতে পরিবর্তন করা-সহ সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। আদালতের নজরদারিতে হবে তদন্ত। স্পর্শকাতর এলাকায় ১৫ দিনের মধ্যে সিসিটিভি বসাতে হবে, বসাতে হবে LED আলোও। মামলাকারীদের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল, প্রাক্তন বিচারপতিকে দিয়ে কমিশন গড়ার আর্জি জানিয়েছিলেন।


বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “সব কিছু দেখে আমাদের কোন সন্দেহ নেই যে এক্ষেত্রে স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থার প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য সব সহযোগিতা করবে তদন্তকারী সংস্থাকে।”

প্রাক্তন বিচারপতিকে দিয়ে কমিশন করার আর্জির বিষয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “আমাদের মনে হয় এক্ষেত্রে সিবিআই তদন্ত করুক। সিবিআই এই মামলায় ইতিমধ্যেই যুক্ত, তাই তারাই তদন্ত করতে পারবে। সিবিআইকে সাহায্য করবে রাজ্য।” সিবিআই-কে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।


কাদের জমি নেওয়া হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, তাও জানাবে সিবিআই। সিবিআই-কে যে কেউ এক্ষেত্রে তথ্য দিতে পারে। সিবিআই এই জমি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের পর রিপোর্ট দেবে। তারপর আদালত এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তবে বিচারপতির আরও নির্দেশ, তদন্তের পাশাপাশি, সিবিআই-কে সাক্ষীদেরও নিরাপত্তার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করতে হবে। সন্দেশখালির উপদ্রুত এলাকায় বসাতে হবে CCTV।

রেশন দুর্নীতি মামলায় গত ৫ জানুয়ারি এক মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা, সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। সেদিন থেকে সন্দেশখালি খবরের শিরোনামে। শাহজাহান অনুগামীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছিল ইডি আধিকারিকদের। প্রথম শাহজাহানকে ‘মাসিহা’ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছিল। সেই ঘটনার কয়েকদিন পর থেকে সন্দেশখালির বেড়মজুর, পাত্রপাড়া-সহ একাধিক এলাকার মহিলারা রাস্তা নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। উঠে আসে নারী নির্যাতনের একের পর এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ, সঙ্গে জমি, সম্পত্তি দখলের অভিযোগ। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালি, জারি হয় ১৪৪ ধারা। বারবার সেখানে যেতে গিয়ে বাধা পান বিজেপির প্রতিনিধি দল। ৫৫ দিন পর শাহজাহান গ্রেফতার হন। পরে আদালতের নির্দেশ আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল সন্দেশখালিতে ক্যাম্প করে নারীদের নির্যাতনের অভিযোগ নথিভুক্ত করেন। পরে সেগুলি হলফনামা আকারে আদালতে জমা দেন। অভিযোগের ভয়াবহতা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। তদন্ত যে স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থার হাতেই যেতে চলেছে তার আভাস মেলে গত শুনানিতেই।

মামলাকারী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, “আমরা যে অভিযোগ করছিলাম, ওখান থেকে সব অভিযোগ নিয়ে হলফনামা জমা দিয়েছিলাম। অনেক শাহজাহান রয়েছে। ১৫০ জনের নাম রয়েছে। আমি সেই তালিকা সিবিআই-কে দেব। গ্রেফতার হবে।” সন্দেশখালিকাণ্ডে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতও প্রকাশ্যে এসেছে। বঙ্গে এসে সন্দেশখালি ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে গিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণা আগে বারাসতের সভা শেষে সন্দেশখালির মহিলাদের সঙ্গে দেখাও করেন। ভোট প্রচারে এসেও সন্দেশখালি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বারবার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, ‘সব অভিযুক্তকে জেলে ঢোকানো হবে। প্রত্যেকে সাজা পাবে।’ বুধবারও বঙ্গে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে যান, ‘কোনও দুষ্কৃতীকে রেয়াত করা হবে না।’

এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, ” সিবিআই কনভিকশন রেট কটা? প্রত্যেকটা কেসই তো তারা রবি ঠাকুরের নোবেল প্রাইজ খুঁজে পাওয়ার মতো করে তদন্ত করছে। বিগত দু’বছরে বাংলায় ২৭-২৮ কেসে সিবিআই তদন্ত করছে। কটা কেসের সুরাহা হয়েছে?”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours