ম্যাচের পরিস্থিতির নিরিখে কপিল দেব ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল শোচনীয় জায়গা থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপ্টিলও। তাঁকে অবশ্য কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে হয়নি। তাই ঘুরে ফিরে কপিল দেবের ইনিংসের সঙ্গে ম্যাক্সির ডাবল সেঞ্চুরির তুলনা চলে আসছে। কোনটা সেরা। যেটার সম্পর্কে শুনেছি, না যেটা দেখলাম? কঠিন প্রশ্ন!
কপিলের ইনিংসের চেয়ে কি সেরা ম্যাক্সওয়েলের ২০১?
কপিল দেব যদি সেই ইনিংসটা না খেলতেন, ভারত কি প্রথম বিশ্বকাপ জিততে পারতো? সহজ উত্তর, কখনোই না। ফাইনালেই তো যেতে পারতো না ভারত! ১৯৮৩ বিশ্বকাপের সেই মহাকাব্যিক ইনিংস অনেকের কল্পনায়। যাঁরা মাঠে উপস্থিত ছিলেন, একমাত্র তাঁরাই কপিল দেবের সেই ইনিংস দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ওয়াংখেড়েতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস কোটি কোটি মানুষ দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তুলনা হচ্ছে, কপিল দেবের চেয়েও কি সেরা ইনিংস খেললেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল? বিস্তারিত জেনে নিন এর এই প্রতিবেদনে।
ভারতীয় ক্রিকেটের রূপকথার মুহূর্ত ১৯৮৩। প্রথম বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। আর এর জন্য কঠিন ধাপ পেরোতে হয়েছিল। তার মধ্য়ে অন্যতম ভারত বনাম জিম্বাবোয়ের সেই ম্যাচ। লন্ডনের অদূরে টার্নব্রিজ ওয়েলসে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও জিম্বাবোয়ে। বিবিসির ধর্মঘটের কারণে ভারত বনাম জিম্বাবোয়ের সেই ম্যাচ সম্প্রচার হয়নি। কোনও ভিডিয়ো ফুটেজও নেই। সেই ইনিংস দেখার সুযোগ হয়নি।
জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক কপিল দেব। কিন্তু এমন পরিস্থিতি হবে, যা যেন প্রত্যাশা করেননি। মাত্র ১৭ রানের মধ্যেই পাঁচ উইকেট হারায় ভারত। তড়িঘড়ি মাঠে নামতে হয় ক্যাপ্টেন কপিলকে। ৬০ ওভার ব্যাট করা দূর অস্ত, কোনওরকমে ১০০ রান তোলা যায় কিনা, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। যদিও কপিল দেবের মহাকাব্যিক ইনিংস। মাত্র ১৩৮ বলে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ৮ উইকেটে ২৬৬ রান করে ভারত। বোলারদের সৌজন্যে ৩১ রানে জয়।
ওয়েংখেড়েতে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ২৯২ রান তাড়া করতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম দুটো ম্যাচে হার। এরপর থেকে টানা জয়ে সেমিফাইনালের দৌড়ে ছিল অজিরা। কিন্তু রান তাড়ায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, সেটা হয়তো কেউ প্রত্যাশা করেনি। ১৯ ওভারের মধ্যেই ৯১ রানে ৭ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। গ্যালারিতে আফগান সমর্থকরা আগাম উৎসব শুরু করে দিয়েছেন। আফগানিস্তান প্লেয়াররাও কার্যত ধরে নিয়েছিলেন, এখান থেকে ম্যাচ জেতা শুধুই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ক্রিজে যে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল!
উল্টোদিকে ক্যাপ্টেন কামিন্সকে দিয়ে টেস্ট খেলালেন। ম্যাক্সি ঝড় তুললেন। মাত্র ৭৬ বলে সেঞ্চুরি। ৫০ ওভার ফিল্ডিং করার পর ব্যাটিং। পায়ে টান ধরে, কোমরে সমস্যা। সেঞ্চুরির পর দৌড়নোই দায় হয়ে পড়েছিল। ফিজিও এসে পরীক্ষাও করেন। তাঁকে মাঠ ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ম্যাক্সি মাঠ ছাড়েননি। পরিস্থিতি এমনই, শট খেলার সময় পা নাড়াতে পারছেন না। তাতে কী! জায়গায় দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য কিছু শট খেললেন। খাদের কিনারা থেকে ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস। ৬ মেরে নিজের ডাবল সেঞ্চুরি এবং দলের জয় নিশ্চিত করেন।
ম্যাচের পরিস্থিতির নিরিখে কপিল দেব ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল শোচনীয় জায়গা থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপ্টিলও। তাঁকে অবশ্য কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে হয়নি। তাই ঘুরে ফিরে কপিল দেবের ইনিংসের সঙ্গে ম্যাক্সির ডাবল সেঞ্চুরির তুলনা চলে আসছে। কোনটা সেরা। যেটার সম্পর্কে শুনেছি, না যেটা দেখলাম? কঠিন প্রশ্ন!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours