ভারতের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। চিনে নিন এই স্পষ্টবক্তা বিচারপতিকে।


দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে কাজ করার পর, বুধবার (৯ নভেম্বর) ভারতের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নিলেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। আগামী দুই বছর তিনি এই পদে থাকবেন। ৪৪ বছর আগে তার বাবা বিচারপতি ওয়াইভি চন্দ্রচূড়ও ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। অর্থাৎ, বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং তার বাবাই ভারতের বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে প্রথম পিতা-পুত্র জুটি হিসেবে দেশের প্রধান বিচারপতির পদ অলঙ্কৃত করলেন।



প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

১৯৫৯ সালের ১১ নভেম্বর, মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়। তাঁর পিতা যশবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড় ছিলেন দেশের ১৬তম প্রধান বিচারপতি। শুধু তাই নয়, ১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৮৫ সালের ১১ জুলাই – এখনও পর্যন্ত সবথেকে দীর্ঘ সময় এই পদে ছিলেন তিনি। নয়া দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স-সহ বিএ পাস করেছিলেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। ১৯৮২ সালে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ল সেন্টার থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে জুরিডিকাল সায়েন্সেস বিষয়ে এলএলএম ডিগ্রি এবং ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন

হার্ভার্ড থেকে স্নাতক হওয়ার পর, চন্দ্রচূড় বম্বে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে আইন অনুশীলন শুরু করেন। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে বম্বে হাইকোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি ভারতের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বম্বে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হয়েছিলেন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে, তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন। আর ২০১৬ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর, বিচারপতি চন্দ্রচূড়কে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সদ্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত।

স্মরণীয় রায়



সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য রায় দিয়েছেন, কিংবা রায়দানকারী বেঞ্চের সদস্য ছিলেন। বারবর স্পষ্টবক্তা হিসেবে পরিচিত বিচারপতি চন্দ্রচূড় বেশ কিছু ক্ষেত্রে বেঞ্চের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধ মতও প্রকাশ করেছেন। শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে মামলার শুনানিকারী বেঞ্চের অংশ ছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি বলেছিলেন, ‘শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রবেশাধিকার না দেওয়া সাংবিধানিক নৈতিকতা লঙ্ঘনকারী।’ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ৫ জন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতারের বিরোধিতা করে ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার যে মামলা করেছিলেন, সেখানে বেঞ্চের বাকি বিচারপতিদের থেকে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি বলেছিলেন, ‘বিষয়টি হল সংবিধানের ১৯ এবং ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযুক্তদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না।’ অযোধ্যার রাম জন্মভূমি বিতর্ক মামলার শুনানিকারী পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চেও ছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। অনুচ্ছেদ ৩৭৭-কে নিরপরাধীকরণ করার বেঞ্চেরও অংশ ছিলেন তিনি। সম্প্রতি অবিবাহিত মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার মামলার রায়ও দিয়েছে তাঁর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours