মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Alapan Banerjee) খুনের হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন এক চিকিত্‍সক-সহ তিনজন। ধৃতদের জেরায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। একের পর এক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়াই 'অভ্যাসে' পরিণত হয়েছিল চিকিত্‍সকের।একা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, একইদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-সহ মোট সাতজন বিশিষ্ট পদাভিষিক্ত ব্যক্তিকে স্পিড পোস্টে হুমকির চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। এমনকী, গত দু'বছর ধরে বহু ব্যক্তিকে এধরনের হুমকি চিঠি পাঠিয়েছেন। জেরার মুখে ওই চিকিত্‍সকের দাবি, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সেই কারণেই এই কাজ করেছেন। যদিও পুলিশ তাঁর 'মেডিক্যাল হিস্ট্রি' খতিয়ে দেখছে।প্রসঙ্গত. আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুমকি চিঠি দেওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে লালবাজারের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন চিকিত্‍সক ডা. অরিন্দম সেনকে। তিনি দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্‍সক ও বেসরকারি ডাক্তারি কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। এ ছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন চিকিত্‍সকের গাড়ির চালক রমেশ সাউ ও দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একজন টাইপিস্ট বিজয়কুমার কয়ালকে।

গত ২৬ অক্টোবর সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, 'আপনার স্বামীকে খুন করা হবে। আপনার স্বামীকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।' আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি লালবাজারে জানান। তদন্ত শুরু করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁরা স্পিড পোস্টের খামটি দেখে জানতে পারেন, সেটি ২৫ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার শরত্‍ বোস রোড পোস্ট অফিস থেকে পাঠানো হয়েছে। একই দিনে এই পোস্ট অফিস থেকে মেডিক্যাল এডুকেশনের ডিরেক্টর, সায়েন্স সেক্রেটারি, এনআরএস হাসপাতালের অধ্যক্ষ, জুলি ভট্টাচার্য, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, স্বাস্থ্যদপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে স্পিড পোস্টে হুমকি চিঠি পাঠানো হয়।

যেমন, এনআরএসের অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, চিকিত্‍সকদের বিক্ষোভ শুরু হবে। দু'জন চিকিত্‍সকের মৃত্যু হবে। তাঁরা ওই চিঠিগুলিকে 'পাগলের প্রলাপ' বলেই উড়িয়ে দেন। তাই অভিযোগও জানাননি। পুলিশ শরত্‍ বোস রোডের সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে। কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়। একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জেরা করা হয়। যদিও আলাপনবাবুকে হুমকির চিঠিতে গৌরহরি মিশ্র নামে যে প্রেরকের নাম ছিল, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি নির্দোষ।



গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এর আগেও আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি একই ধরনের হুমকির চিঠি পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন যাদবপুরের বেসরকারি হাসপাতালটির কয়েকজন চিকিত্‍সকও। প্রত্যেকটি টাইপ করা চিঠি। পাঠানো হয়েছে স্পিড পোস্টেই। ফলে সেগুলি কোনও পেশাদার টাইপিস্টের কাছ থেকে টাইপ করা হয়েছে বলেই পুলিশ নিশ্চিত হয়। সেইমতো দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় টাইপিস্টদের কাছে যান গোয়েন্দারা। সন্দেহজনক ব্যক্তির ফুটেজ দেখানো হয়। একটি সূত্র ধরে এগিয়ে বিজন সেতুর কাছে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে কর্মরত এক টাইপিস্টের উপর সন্দেহের তির গিয়ে পড়ে।

বিজয়কুমার কয়াল নামে ওই বৃদ্ধকে জেরা করতেই তিনি স্বীকার করেন যে, কখনও এক চিকিত্‍সক তাঁর চালককে নিয়ে, আবার কখনও শুধু চালক এসে এই হুমকির চিঠি তাঁকে দিয়ে টাইপ করান। একেকটি চিঠির জন্য তাঁকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সেইমতো উত্তর কলকাতার রাজা রামমোহন রায় সরণির বাড়ির সামনে থেকে ডা. অরিন্দম সেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জেরা করে মানিকতলা থেকে ধরা হয় চালক রমেশ সাউকে।

জানা গিয়েছে, চিকিত্‍সক সাধারণত নিজে চিঠির ড্রাফট লিখে তা চালককে দিয়েই পাঠাতেন টাইপ করাতেন। তার পর চালকই পোস্ট অফিসে গিয়ে স্পিড পোস্ট করাত। চালকের সিসিটিভি ফুটেজই পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। ধৃত চিকিত্‍সকের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিগত রাগ থেকেই চিঠি লিখতেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের খবর দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে পাঠাতেন চিঠি।

রাজাবাগান সায়েন্স কলেজের কর্মী গৌরহরি মিশ্র থাকেন চিকিত্‍সকের বাড়ির কাছেই। কিছুদিন আগে গৌরহরিবাবুর স্ত্রী তাঁকে কটূক্তি করেছিলেন তাই গৌরহরিবাবুর উপর শোধ তুলতেই তাঁর নাম করে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুনের হুমকি দেন। একেকজনকে একেকটি নামে চিঠি পাঠানো হত। কয়েক বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয় চিকিত্‍সকের। তাঁর বাবা ডা. সুনীলচন্দ্র সেনও চিকিত্‍সক ছিলেন। মা অধ্যাপনা করতেন। চিকিত্‍সকের পাঠানো চিঠিগুলি উদ্ধার করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।


Information source- সংবাদ প্রতিদিন
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours