বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্তও ভাল ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। এমনকি বিকেলে খেতেও চেয়েছিলেন খাবার। চপ-মুড়ি, চাউমিন- এই সব। নিজের মুখেই খাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয়, সুস্থ হওয়ার পরেই খাবেন তিনি এইসব প্রিয় খাবার।

কিন্তু তা আর হল না। সুব্রতবাবু হয়তো নিজেও জানতেন না, আর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি চিরঘুমে চলে যাবেন। একথা জানিয়েছেন সুব্রতবাবুর আইনজীবী মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, বিকেলে কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই সুব্রতবাবুর দাঁতে দাঁত লেগে যায়। কিছু সময় পরে বাথরুমে যান। বাথরুম থেকে বেরোনোর পরেই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। যার পোশাকি নাম স্টেন্ট থ্রম্বোসিস। রাত নটার পরে সব শেষ। ইচ্ছে মতো পছন্দের খাবারও তাঁর খাওয়া আর হল না। গত ২৪ অক্টোবর শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুব্রত। পরীক্ষা চলার সময়েই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ধরা পড়ে। তখন আর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে উডবার্নের আইসিসিউ-তে ভর্তি করানো হয়। তার পর থেকে সেখানেই তাঁর চিকিত্‍সা চলছিল। সুব্রতবাবুর সিওপিডির সমস্যা অনেক দিনের। পুজোর মধ্যে সেটাই আরও কিছুটা গুরুতর হয়ে ওঠে। তবে ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছিলেন সুব্রত।শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় চলতি সপ্তাহে সোমবারে তাঁর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করানো হয়েছিল। দু'টি 'স্টেন্ট' বসানো হয়েছিল তাঁর শরীরে। কিন্তু সেই স্টেন্টের কারণেই থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। হার্ট ব্লকের ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানোর যে চিকিত্‍সা, তাতে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি থাকে এই থ্রম্বোসিসের, এমনটাই জানাচ্ছিলেন মেডিকা সুপারস্পেশ্যালিটি হসপিটালের ডিরেক্টর অফ ক্যাথ ল্যাব, ডক্টর দিলীপ কুমার। সেই কারণেই এখন এই স্টেন্টের আরও আধুনিক চিকিত্‍সা এসেছে, যাতে করে এই ঝুঁকি এড়ানো যায়। সহজ কথায়, রক্তনালীর ভিতরে রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়ার পদ্ধতিকেই থ্রম্বোসিস বলে। হৃদপিণ্ডের করোনারি রক্তনালিকায় রক্ত জমাট বাঁধলে তা করোনারি থ্রম্বোসিস, যার ফলে হার্ট কাজ করতে পারে না। ফলে মানুষের মৃত্যু হয়। হার্টের রক্তনালী তে ব্লক দেখা দিলে স্টেন্ট বসিয়ে তার চিকিত্‍সা করা হলে, সেই স্টেন্টের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সুব্রতবাবুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসএসকেএম-এ ভর্তি থাকাকালীন এবং চিকিত্‍সা চলার সময়ে যথেষ্ট সুস্থ ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুর আগে তাঁর নিজের মুখে খেতে চাওয়ার কথা বলা তারই প্রমাণ। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পরেই একটি ছবি সামনে এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে এসএসকেএমে চিকিত্‍সাধীন অবস্থাতেই একটি ফাইলে সই করছেন তিনি। গতকাল সন্ধেয় আচমকা সুব্রতবাবু আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর পেয়ে বাড়ির কালীপুজো ফেলে এসএসকেএমে যান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর ডাক্তারবাবুরা মৃত্যুর খবর জানালে মমতা বলেন আলোর দিনে এত বড় অন্ধকার! রাত নটা ২২ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours