অস্ত্রপাচারকারী, মাদক ব্যবসায়ী, আন্তর্জাতিক চোরাচালানে যুক্ত পাঞ্জাবের দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে কি পাকিস্তানের যোগসূত্র রয়েছে? নিহত দুই দুষ্কৃতীর ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে এমন সন্দেহই হচ্ছে তদন্তকারী অফিসারদের। পাঞ্জাবের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' দুষ্কৃতী জয়পাল সিং ভুল্লার ও যশপ্রীত সিং খাড়ার পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এই দুজনের মধ্যে জয়পালই ছিল দুষ্কৃতী দলের অন্যতম পাণ্ডা। খুন, মাদক পাচার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের সঙ্গেও তার যোগসূত্র ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। আবাসনের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে এমন কিছু সূত্র পাওয়া গেছে যার থেকে পাকিস্তান যোগের ব্যাপারটা সন্দেহের তালিকায় চলে এসেছে।  কী কী সেই সূত্র? তদন্তকারী বলছেন, ফ্ল্যাটের আলমারিতে দুষ্কৃতীদের জিনিসপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের জামাকাপড় যে প্লাস্টিকে রাখা ছিল তার ওপর উর্দু ভাষায় পাকিস্তানের ঠিকানা লেখা রয়েছে। কয়েকটি জামাকাপড়ের প্লাস্টিকে পাকিস্তানে পাঞ্জাব প্রদেশের কোনও দোকানের নামও লেখা রয়েছে। যদিও পুলিশ মনে করছে, ঘুরপথে এদের দলেরই অন্য কোনও সদস্য মারফত্‍ সেই প্লাস্টিক হয়ত এসে পৌঁছেছিল ভুল্লার ও যশপ্রীতের কাছে। তবে এই চক্রের সঙ্গে যে পাকিস্তানের যোগাযোগ আছে সেটা একেবারেই উড়িয়ে দিতে পারছেন না অফিসাররা। আরও কিছু সূত্র মিলেছে। তদন্তকারীদের বলছেন, এই দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে তার মধ্যে 'মেড ইন পাকিস্তান' লেখা রিভলবার ছিল। পাক অস্ত্রপাচারকারীদের কাছ থেকে এই রিভলবার দুষ্কৃতীদের হাতে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পাঞ্জাবের এই গ্যাংস্টার দলের পাকিস্তানে যাতায়াত ছিল কিনা সে ব্যাপারে এখনও পোক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে।


পাঞ্জাব পুলিশের ডিজিপি টুইট করে জানিয়েছেন, ১৫ মে লুধিয়ানায় পাঞ্জাব পুলিশের দুই এএসআই-কে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল ভুল্লার ও যশপ্রীত। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে পুলিশ অফিসারদের খুন করা হয়েছিল। সেই অফিসাররা আন্তর্জাতিক ড্রাগ মাফিয়াদের সঙ্গে এই গ্যাংস্টার দলের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই তাদের খুন করে দুষ্কৃতীরা। পাঞ্জাব পুলিশ আরও জানিয়েছে, প্রথম দিকে ভুল্লার ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে খুন, মাদক পাচার ও আন্তর্জাতিক অস্ত্র কারবারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। জম্মু-কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও মাদকের পাচার হত কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিউটাউনের সাপুরজি এলাকার আবাসনে বি-১৫২ টাওয়ারের যে ফ্ল্যাটে থাকত দুষ্কৃতীরা তার খোঁজ দেয় ভরত কুমার নামে আরও এক দাগি আসামি। এরই সাহায্যে বাংলায় পালিয়ে এসে এই ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তারা। পুলিশ জানতে পেরেছে, এত বড় আবাসনের বেশিরভাগ ফ্ল্যাট বন্ধ থাকে। মালিকরা অন্য জায়গায় থাকেন। বেশিরভাগ সময়ে ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া বসিয়ে যান। এজেন্সি মারফত্‍ ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়। এভাবেই হয়ত সাপুরজি আবাসনের ফ্ল্যাটের হদিশ পায় গ্যাংস্টাররা। এজেন্সিকে একমাসের ২০ হাজার টাকা ভাড়া দেয় তারা, আর ১১ মাসের চুক্তিতে ১০ হাজার টাকা করে ভাড়ার বিনিময়ে ফ্ল্যাট নেয় আবাসনে। ২৩ মে থেকে ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে। বাংলার নম্বর প্লেট লেখা একটি গাড়িও ভাড়া নেয়। আবাসনের বাসিন্দারা বলেছে, ফ্ল্যাটের বাইরে খুব বেশি দেখা যেত না তাদের। বাইরে থেকে বেশি লোকের আনাগোনা ছিল না। এমনকি খাবারও আসত বাইরে থেকেই। তাই কেউ সন্দেহ করেনি। ওই ফ্ল্যাটটি যাঁর সেই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। কীভাবে সঠিক পরিচয় না জেনে তিনি ফ্ল্যাট ভাড়া দিলেন বা এর পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours