দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ইদানিং এই বিধি চালু করা নিয়ে চর্চা চলছে। এর মধ্যে এদিন প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, 'দুই ধরনের আইন নিয়ে কীভাবে একটি দেশ চলতে পারে?'

Modi in Bhopal: 'দুই আইন নিয়ে দেশ চলবে কীভাবে?', অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আলোচনা চাইলেন প্রধানমন্ত্রীভোপালের সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

ভোপাল: সোমবার (২৭ জুন), মধ্য প্রদেশের ভোপালে বিজেপির বুথ কমিটিগুলির এক সভায় ইউনিফর্ম সিভিল কোড (Uniform Civil Code) বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে জোরালো সমর্থন জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ইদানিং এই বিধি চালু করা নিয়ে চর্চা চলছে। এর মধ্যে এদিন প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘দুই ধরনের আইন নিয়ে কীভাবে একটি দেশ চলতে পারে?’ তিনি আরও বলেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে গুরুতর আলোচনা শুরু করার সময় এসেছে। এই আইনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলি সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং উসকানি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ করার সময়ে বিরোধী দলগুলির ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।

এদিন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আজ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে মানুষকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। এক সংসারে যদি একেক জনের জন্য একেক রকম নিয়ম হয়, তাহলে সেই সংসার চালানো যায় না। একইভাবে এক দেশে যদি দুই আইন থাকে, তাহলে দেশ চলবে কী করে? সংবিধানেও দেশের প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও বারবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে বলেছে। বিরোধীরা আসলে এই বিষয়টি নিয়েও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে। আমার মতে আমাদের এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত।”

এই প্রসঙ্গেই তিনি তিন তালাক আইনের বিরোধিতার প্রসঙ্গ তোলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিন তালাককে যারা সমর্থন করে, তারা তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে। তারা আমাদের মুসলিম মেয়েদের প্রতি অবিচার করছে। তিন তালাক শুধুমাত্র মুসলিম কন্যাদের ক্ষতি করে না, পুরুষদের উপরও এর সমান প্রভাব পড়ে। বিয়ের দশ বছর পর, কোনও মেয়েকে তিন তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি ফিরিয়ে দিলে, তার বাবা-ভাইয়ের মনের অবস্থা কী হয়, একবার কল্পনা করুন। তিন তালাক যদি ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকে, তাহলে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, জর্ডন, সিরিয়া, বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশগুলিতে এই প্রথা নেই কেন? মিশরও আমাদের ৯০ বছর আগে এই প্রথা সরিয়ে দিয়েছে। আসলে, কিছু মানুষ নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে, তিন তালাক ফাঁসের মাধ্যমে মুসলিম মহিলাদের প্রতি বৈষম্য করতে চায়।”

প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেস নেতা তথা মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য আরিফ মাসুদ বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত, তিনি ড. বি আর আম্বেদকরের তৈরি সংবিধানে হাত রেখে শপথ নিয়েছেন। দেশের সমস্ত অংশের সংবিধানের উপর বিশ্বাস রয়েছে। আমরা এটা বদলাতে দেব না।” ডিএমকে নেতা টিকেএস এলাঙ্গোভান বলেছেন, “প্রথমে হিন্দু ধর্মে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে হবে। তফশিলি জাতি উপজাতি-সহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে দেশের যে কোনও মন্দিরে পূজা করার অনুমতি দেওয়া উচিত। সংবিধান প্রতিটি ধর্মকেই সুরক্ষা দিয়েছে, তাই আমরা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাই না।” জেডি(ইউ) নেতা কেসি ত্যাগী বলেছেন, “অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সকলেই জানে, দেশে একমাত্র বিজেপিই ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করে।” কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল বলেছেন, “প্রথমে দেশের দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্বের বিষয়ে উত্তর দেওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর। পুরো মণিপুর জ্বলছে, কিন্তু তিনি কখনও এই ইস্যুতে কথা বলেন না। তিনি শুধু এই সমস্ত সমস্যা থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours