মাত্র এক সপ্তাহ। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের বাঘের হামলায় মৃত্যু হল এক মত্‍স্যজীবীর। নুন আনতে পান্তা ফুরায় ঘরে। বাধ্য হয়েই তাই গভীর জঙ্গলে যাত্রা। কখনও কাঠ মধু সংগ্রহ করতে কখনও বা নদীতে কাঁকড়া-মাছ শিকার করা। আয় হয় সেখান থেকেই। সেইরকমই দিনদুয়েক আগে রায়দিঘি রেঞ্জের আজমলমারি জঙ্গলে গিয়েছিলেন পঞ্চু।তবে একা নন, সঙ্গে অন্য সঙ্গীরাও ছিল। কিন্তু, শনিবার বিকেলে আচমকাই বাঘের হামলায় মৃত্যু হল তাঁর।

মৃত পঞ্চু মুণ্ডার সঙ্গীরা জানিয়েছেন, শনিবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু, তার আগেই বিপদ! ওইদিন বিকেলে কাঁকড়া ধরা শেষ করে বাড়ির দিকে যখন রওনা হচ্ছেন পঞ্চুরা, সেইসময় আচমকা নৌকার মধ্য়েই লাফ দেয় দক্ষিণরায়। পেছন থেকে পঞ্চুকে পেয়ে তাঁর কাঁধেই কামড় বসায় বাঘ! নৌকার মধ্যে কার্যত বাঘে-মানুষে খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। পঞ্চুকে কামড়ে ধরে তাঁকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে বাঘটি। কিন্তু, বাকি জেলেদর চিত্‍কারে লাঠিসোঁটা নিয়ে এগিয়ে আসাতেই চম্পট দেয় ডোরাকাটা।

তীরে তরী এসে পৌঁছনোর আগেই নৌকার মধ্যে মৃত্যু হয় বছর সাতান্নর পঞ্চুর। তাঁর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন সঙ্গীরাই। কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ উপকূল থানার অন্তর্গত মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চুর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে কার্যত ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবার। গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া।

বনদফতর সূত্রে খবর,গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পঞ্চুদের কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বারবার বারণ করা সত্ত্বেও তাঁরা কেন গভীর জঙ্গলে গিয়েছিলেন কাঁকড়া ধরতে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

গত মঙ্গলবারই, কুলতুলির বেনিফেলি জঙ্গলে বাঘের হানায় আক্রান্ত হয়েছিলেন মত্‍স্যজীবী শঙ্কর। পরবর্তীতে তাঁর এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয়। গত রবিবারই, বসিরহাট রেঞ্জের বাগনা বিটের অন্তর্গত ঝিলা এক নম্বর জঙ্গলে বাঘের হানায় মৃত্যু হয়েছে এক মত্‍স্যজীবীর। স্থানীয়রা জানান, অরবিন্দ বিশ্বাস নামের ওই মত্‍স্যজীবী-সহ আরও তিন মত্‍স্যজীবী রবিবার সকালে কাঁকড়া ধরার জন্য গভীর জঙ্গলে যান। অরবিন্দের প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, নদীতে কাঁকড়া ধরার সময় হঠাত্‍ জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে অরবিন্দের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঘ তাঁকে ধরে জঙ্গলে নিয়ে চলে যায়। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফে জানানো হয়েছে, অবৈধ ভাবে কাঁকড়া ধরার সময় বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েন অরবিন্দ। মত্‍স্যজীবীদের কাছে কোনও বৈধ অনুমতিপত্র ছিল না বলেও জানানো হয়।

বস্তুত, বারবার বাঘের হানায় ত্রাসে সুন্দরবন। কিছুদিন আগেই কুলতলির গ্রামে টহল দিচ্ছিল রয়েল বেঙ্গল। সেই ডোরাকাটাকে ধরতে কার্যত ৬দিন ৬ রাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি গ্রামবাসী। ফের বাঘের হানা। একের পর এক এভাবে বাঘের আনাগোনা কেন লোকালয়ে তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours